“বোবা ধরা” সম্পর্কে ইসলাম কি বলে এবং এর প্রতিকার।

বোবা ধরা’ সারা বিশ্বের সকল সমাজে প্রচলিত অতি প্রাচীন এবং অতি প্রাকৃতিক ঘটনা। একে ঘুম বিশেষজ্ঞগণ চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় “স্লিপিং প্যারালাইসিস” (Sleeping Paralysis) বলে আখ্যায়িত করে থাকেন। আর এর কারণ হচ্ছে বর্তমান চিকিৎসাবিজ্ঞান সেক্যুলার নাস্তিক্যবাদে বিশ্বাসী এবং ধর্মীয় বিশ্বাস ও অতিপ্রাকৃতিক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ বিবর্জিত। তাই তারা এই প্রাচীন এবং বর্তমানেও সংঘটিত ও অভিজ্ঞতালব্ধ বিষয়টিকে (বোবা ধরাযখন কাউকে বোবায় ধরে এবং তাদের মধ্যে কেউ কেউ যখন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হন, ঐ সকল বিশেষজ্ঞগণ এর চিকিৎসায় ঘুমের পিল এবং আরও কিছু মনোরোগ, শ্বাস-প্রশ্বাস ও স্বাভাবিক রক্ত সঞ্চালনের ওষুধ দিয়েই ক্ষান্ত হন। সম্ভব হলে নিজের তত্বাবধানে রেখে নিয়মিত চেক-আপও করেন। কিন্তু তারপরও যখন কোনো সুচিকিৎসা দিতে পারেন না, তখন বলেন, এটা “প্যারানরমাল” (Paranormal), “সুপার-ন্যাচার‍্যাল” (Supernatural) বা “অদ্ভূদ রোগবিশেষ”!! যদিও বোবায় ধরা কোন মানসিক রোগ নয়।
মুলতঃ এর ব্যাখ্যা ইসলাম অত্যন্ত ভালভাবেই দিতে পারে। এর জন্য আসুন জেনে নিই, ইসলামী দর্শন এ বিষয়টিকে কিভাবে ব্যাখ্যা করে।
আপনারা জানেন, পৃথিবীতে সৃষ্টিকুলের মধ্যে যেমন দৃশ্যমান মানবজাতি এবং জীব-জন্তু রয়েছে, তেমনি রয়েছে অদৃশ্যমান জ্বীনজাতি ও ফেরেশতাকুল। জ্বীন সম্প্রদায়ের মধ্যেও মানুষের মতো বোবার অস্তিত্ব আছে। সেইসব বোবা জ্বীনদের মধ্য থেকে কতিপয় জ্বীন যখন মানব সমাজে চলে আসে বা বিচরণ করে, তারা অন্যান্য স্বাভাবিক জ্বীনের মতো মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে পারে না, আর পারে না অন্যান্য জ্বীনদের সাথেও তাদের মতামত আদান-প্রদান করতে। তাই তারা কখনও কখনও তাদের ইচ্ছেমত মানুষকে বিরক্ত করে। অন্য সময় পারে না বলে ঘুমের সময়টাকেই তারা বেছে নেয়।
কখনও কখনও এই সব বোবা জ্বীন তাদের পছন্দমত মানুষের কাছে আসে এবং ঘুমের মধ্যে তার উপর ভর করে। পছন্দমত বলছি এ কারণে, যেহেতু তারা দুনিয়ার সকল মানুষকেই ধরে না। ফলে অনেক মানুষই বলে থাকে যে, “আমাকে তো কখনই বোবায় ধরে না?” যাই হোক, বোবা জ্বীনরা কখনও দুষ্টামী করেই কারও উপর ভর করে, আবার কখনও ইচ্ছাকৃতভাবে ভয় দেখানোর জন্য কিংবা বিরক্ত হয়েই তার উপর ভর করে। তবে ঠিক কি কারণে তারা এমনটি করে, তা জানা সম্ভব হয় না এ কারণে যে, তারা বোবা (হাজারবার জিজ্ঞেস করলেও এরা আপনাকে উত্তর দিতে পারবে না)। তাই শুধু অনুমান করা যায় মাত্র। এমনও ঘটেছে যে, সারা জীবনে কোনো কোনো মানুষকে মাত্র একবার বোবায় ধরে, আবার কেউ কেউ বহুবার তাকে বোবায় ধরেছে বলেও স্বীকার করে। এর সঠিক কারণ জানা যায় না যে, কেন কারো ক্ষেত্রে কম আর কারো ক্ষেত্রে বেশি পরিমাণে ঘটে থাকে? আল্লাহ পাক এবং তাঁর রসূলই এর অধিক ভাল জানেন।
► বোবায় ধরলে কী কী অভিজ্ঞতা হতে পারে?
————————————–
এখানে একটি বিষয় ব্যাখ্যা করা দরকার, তা হলো অনেকের এমন হয়, বোবায় যে ধরেছে, এটা বুঝার পূর্বে তারা অনেক দুঃস্বপ্ন দেখতে থাকেন। তারপর দুঃস্বপ্নের এক পর্যায়ে তারা বুঝতে পারেন, তাদের পুরো শরীরের উপর বা কোনো বিশেষ অঙ্গের (যেমনঃ মাথা, বুক, হাত ইত্যাদি) উপর কেউ ভর করে আছে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে কারও (জ্বীনের) লোমশ হাতের কথাও অনেকে বলে থাকেন। এক এক জনের অভিজ্ঞতা এক এক রকম। যাই হোক, দুঃস্বপ্ন দেখতে থাকার কারণ হলো, ঐসব বোবা জ্বীন স্বল্প সময়ের জন্য মানুষের স্বপ্নকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং তারা সাধারণত দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে মানুষকে নিতেই পছন্দ করে যেন ঐ সকল মানুষ স্বপ্নের এক পর্যায়ে আকস্মিক ঘুম ভেঙ্গে উঠে অসহনীয় এবং প্রতিকূল পরিস্থিতি অনুভব করে। তাই এটা বোবা জ্বীনদের মানুষের শরীরের নড়াচড়া করতে না দেয়ার পাশাপাশি আরেকটি কূট-কৌশল।
Updated: December 7, 2019 — 12:23 pm