Categories: My Study

The Garden Party in Bangla | Bangla Don

Translated by : Bangla Don
Fiction : The Garden Party
By : KATHERINE MANSFIELD
The Garden Party in Bangla | Bangla Don

সব মিলিয়ে , আজকে পরিবেশটা সুন্দর । গার্ডেন পার্টি করার জন্য এর চেয়ে ভালো দিন মনে হয় আর তারা পেতো না । কোন বাতাস নেই । উপরে মেঘহীন আকাশ , চারিদিকে শান্ত , মনোরম পরবেশ । আকাশে স্বর্ণালী আভা ছেয়ে আছে , গ্রীষ্মকাল তখন আসন্ন । বাগানের মালিরা ভোর হতে কাজ করা শুরু করেছে । আগাছা পরিষ্কার , গাছের পাতা ছাঁটাই এর পর ছিমছাম , উজ্জ্বল বাগানে পরিনত হয়েছে । পুরো বাগান যেনো হাসছে । গোলাপ ফুল গুলো আরো সতেজ মনে হচ্ছে । গোলাপ ফুল সবার কাছে পরিচিত , মনে আনন্দ জাগাতে পারে সহজে এই ফুল । একরাতে একসাথে একশোটা গোলাপ ফুটেছে । ঘাসগুলো গাছের চারপাশে মাথা নত গোলাপ রানীকে অভ্যর্থনা জানাচ্ছে ।

তাঁবুতে আসার আগে সকালের নাস্তা হবে না ।

“তাঁবু কোথায় হবে, মা ? ”

“সোনামণি , এইসব আমাকে জিজ্ঞেস করে কোন লাভ নেই । এই বছর সবকিছু তোমাদের উপর ছেড়ে দিয়েছি । আমি যে তোমাদের না তা ভুলে যাও । মনে করো আমি তোমাদের অতিথি । ”

কিন্তু মেগ সম্ভবতঃ যেতে পারছিলো না , মানুষদেরকে সামলাতেও পারছিলো না । সকালের নাস্তার আগে সে চুল ধুয়েছে । মাথায় সবুজ পাগড়ি দিয়ে কফি খাচ্ছে । মাথা থেকে সিক্ত কোঁকড়ানো চুল গড়িয়ে মুখের উপর পড়েছে । প্রজাপতি , জস্‌ ,সব সময় উড়ে এসে সিল্কের পেটিকোট , জ্যাকেটের উপর বসে ।

“লরা , তোমাকে এখন যেতে হবে । তুমি কাজ অনেক সুন্দর / ”

মাখন আর রুটি নিয়ে লরা দৌড়ে চলে গেল। অনেক সুস্বাদু , বাইরে খাওয়ার জন্য দারুন এক খাবার । সে এই সব জিনিস আয়োজন করতে পছন্দ করে , মনে করে সে অন্যদের চেয়ে এই কাজে একটু বেশি ভালো ।

শার্ট পরা , চার লোক , এক সাথে বাগানের পথে দাঁড়িয়ে আছে । তাদের কাছে কাপড়ের রোল , কাঁথে বড় ব্যাগ । তাদেরকে দেখতে অনেক ভালো লাগছে । লরার এখন মাখন -পাউরুটি পরে খাবে চিন্তা করলো , কিন্তু পাউরুটি কোথাও রাখার জায়গা পাচ্ছে না । সে একটু লজ্জা পেলো , তাড়াতাড়ি নিজেকে সামলিয়ে তাদের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো ।

“শুভ সকাল ” তাঁর মায়ের কণ্ঠ অনুকরণ করে বললো । কিন্তু কথা শুনে মনে হলো সে লজ্জা পেয়েছে । অপ্রস্তুত হয়ে ছোট মেয়েদের মতন তোতলানো শুরু করেছে । ” আ — আপনারা এসেছেন — এটা কি তাঁবু ? ”

‘জি , মিস্‌ ‘ লম্বা , পাতলা করে লোকটা উত্তর দিল । তাঁর সঙ্গীদেরকে টুল ব্যাগ দিয়ে , টুপি নামিয়ে একটু মুখে হাসি নিয়ে বললো , ‘এটাই ‘

তাঁর বন্ধুত্বপূর্ণ , সাবলীল হাসির কারণে লরা নিজেকে সহজে সামলিয়ে নিলো । কি সুন্দর তাঁর চোখ , কিন্তু গাঢ় নীল । এখন সে অন্যদের দিকে তাকিয়ে দেখলো , তারা হাসছে । ” ভয় পাবেন না , আমরা কামড়াবো না । ” হাসতে হাসতে বললো । কতো ভালো কর্মী । সকালও অনেক সুন্দর । তাদের সামনে সকাল নিয়ে তো কথা বলবে না । তাকে একটু সিরিয়াস হতে হবে ।

‘লিলি গাছের জায়গাটাতে কি রাখা যাবে ? ‘

লিলি ফুলগুলোর আইলের দিকে আঙ্গুল দিয়ে দেখালো । তারা সেদিকে ঘুরে তাকালো । মোটা লোকটি অধর বাঁকা করলো , লম্বা লোকটি ভ্রূ কুচকালো ।

“আমার ইচ্ছে নেই ” সে বললো । ” ভালো দেখাবে না ‘ সে সহজভাবে ঘুরে বললো , ”যেখানে সহজে চোখে পড়বে সেখানে রাখলে ভালো হবে । ‘

তাদের জ্ঞান দেখে লরা কিছুটা অবাক হয়ে গেলো ।

সে বললো , ‘ টেনিস কোর্টের কর্নারটা ” । ‘ কিন্তু গানের ব্যান্ডের আয়োজন এক কর্নারে হবে । ‘

‘হুম , আপনি ব্যান্ডের আয়োজন করতে যাচ্ছেন ? ‘ কিছুটা ম্লান মুখে আরেকজন লোক জিজ্ঞেস করলো । পরিশ্রম করতে করতে চোখমুখ বসে গেছে । চোখ দিয়ে ভালো করে টেনিস কোর্ট দেখতে থাকলো । কি চিন্তা করছে সে ?

“শুধু ছোট একটা ব্যান্ড পার্টি । ” লরা শান্তভাবে বললো । যদি সে কিছু মনে না করে । লম্বা করে লোকটা বাধা দিয়ে বললো ।

“মিস , দেখেন এইখানে । গাছের সাথে জায়গাটা , ভালো হবে মনে হচ্ছে । ”

কারাকাস গাছের সাথে জায়গাটা । ওইখানে তাঁবু দিলে গাছ দেখা যাবে না । গাছের পাতাগুলো প্রশস্ত , উজ্বল , ছোট ছোট গুচ্ছ গুচ্ছ হ্লুদ রঙের ফল থাকে । তাদেরকে দেখলে মরুভুমির গাছগুলোর কথা মনে হয় , তপ্ত ভুমিতে , নির্জন জায়গায় , চুপি চুপি পাতা মেলে ধরে । কি চমৎকার দৃশ্য ! এখন তাঁবু হলে কি তারা আড়ালে পরে যাবে ?

অবশ্যই । এরই মধ্যে লোকগুলো কাঁধে লাঠি নিয়ে তৈরি হয়েছে , জায়গা চিহ্নিত করতে । লম্বা লোকটি গিয়ে ল্যাভেন্ডারের পাতায় চিমটি কাটলো । তাঁর বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে নাকের কাছে নিয়ে সুগন্ধ নিলো । যখন লরা এটি দেখলো , সে কারাকাসের কথা ভুলে গিয়ে মানুষটির প্রতি আশ্চর্য হলো । কয়জন মানুষ এইরকম করে ? কতো ভালো এই লোকগুলো , সে মনে মনে ভাবলো । রবিবার রাতে খাবারের সময় বোকা বন্ধুরা এসেছিলো । তাদের চেয়ে এই সব লোকদের বন্ধু বানানো উচিত ছিলো না ? তাদের পেলে আরও ভাল হতো ।

সে মনে করলো তাঁর ভুল হয়ে গিয়েছে । লম্বা লোকটা খামের উপর দিয়ে কিছু আঁকছে । মনে হচ্ছে কিছু একটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে আঁকছে , বাম দিক দিয়ে আস্তে আস্তে নেমে গেছে । অদ্ভুত আঁকা । কিনু তাঁর এই সব কিছু নিয়ে কোন চিন্তা নেই । তারপর তারা কাঠের হাতুড়ি নিয়ে আসলো । একজন শিষ বাজালো , আরেকজন গান গাওয়া শুরু করলো । ” ঠিক আছিস্‌ , দোস্ত ? ” “দোস্ত ! ” আন্তরিকতার জন্য কথাটি বলা । শুধু সে কেমন আছে তা বুঝার জন্য । সে কেমন অনুভব করছে লম্বা লোকটিকে তা দেখানোর জন্য । লরা একটা বড় কামড় বসালো পাউরুটির মধ্যে , আর ড্রয়িং এর দিকে তাকিয়ে থাকলো । মনে হচ্ছে সেও কাজ করতে নেমেছে ।

‘লরা , লরা , তুমি কোথায় ? টেলিফোন লরা !! ‘ একটা কান্নার শোর ভেসে আসলো বাড়ি থেকে ।

‘আসছি ‘ সে দৌড় দিতে দিতে বললো । আইলের উপর দিয়ে , পথ পেরিয়ে , উঠান , বারান্দা পেরিয়ে সে ছুটতে থাকলো । হলের ভিতর , বাবা , লরি তাদের টুপি পরিষ্কার করছে অফিসে যাবার জন্য ।

“আমি বলি , লরা । ” লরি দ্রুত বললো । “তুমি একটু বিকাল পর্যন্ত কোটের দিকে একটু খেয়াল রেখো । যদি প্রেস করা লাগে কি না ! ”

“জি , আমি করবো ” সে বললো । কিন্তু হথাৎ করে , সে নিজেকে থামাতে পারলো না । লরির দিকে ছুটে জড়িয়ে ধরে বললো , “ওহ , আমি পার্টি পছন্দ করি , তুমি করো না ? ” হাঁপাতে লাগলো ।

“তার চেয়ে বরং ” লরি কোমল , বালকসুলভ কণ্ঠে বললো । তাকে জড়িয়ে আস্তে আস্তে করে ধাক্কা দিয়ে বললো , ‘ ছুটে ফোনের কাছে যা , বুড়ী ‘

টেলিফোন । “হ্যাঁ , হ্যাঁ । কিটি ? শুভ সকাল , প্রিয় । লাঞ্চ করতে আসো । অনেক সুস্বাদু অবশ্যই । স্ক্র্যাচ খাবার শুধু । স্যান্ডউইচ এর গুড়া , তারপর ডিমের সাদা অংশ এইগুলো দিয়ে । সকালের জন্য তো চলবে , তাই না ? তোমার সাদা ? ওহ , আমি অবশ্যই করবো । এক মিনিট । লাইনে থাকো । মা ডাকছে । ” লরা বসে পড়লো । ‘জি , মা । কিছু শুনতে পারছি না । ‘

মিসেস , শিরাদনের কণ্ঠ সিঁড়ি থেকে ভেসে আসছে । ‘ রবিবারে যে সুন্দর টুপিটা পরেছে , তা পরতে বলো ‘

‘মা বলেছে , তুমি যে টুপি রবিবারে পড়েছিলে , তা পড়তে । ভালো । একটা বাজে । বাই বাই ‘

লরা ফোন রেখে দিলো । মাথার উপর হাত নিয়ে এক দীর্ঘশ্বাস নিলো । ‘আ হা’ সে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো । কিছুক্ষন পর সে আবার বসে পড়লো । সে এখনো শুনছে । সব দরজা মনে হয় খুলে যাবে । ঘরে এক ধরনের শব্দ চারিদিক থেকে ভেসে আসছে । রান্নাঘরের পাশের রুমের দরজাটা খুলছে আর দম্‌ করে বন্ধ হচ্ছে । এক ধরনের অদ্ভুত চাপা আওয়াজ আসছে । মনে হচ্ছে কেউ পিয়ানো বাজাচ্ছে । কিন্ত বাতাস !! কিন্তু বাতাসে এই ধরনের আওয়াজ কিভাবে আসে ? উপরের জানালা আর বাইরের দরজা থেকে থেকে অল্প অল্প করে বাতাস আসছে । দেয়ালে দুই জায়গায় সূর্যের আলো পড়ছে ,কালির দোয়াত , ফোটোগ্রাফের ফ্রেম নড়ছে । কিছুটা ঠাণ্ডা , উষ্ণ । রুপালি রঙের দোয়াত জ্বলজ্বল করছে । তার ইচ্ছে করতে ওইটাতে একটা চুমু দিতে ।

দরজার বেল বেজে উঠলো । সেই ঘণ্টার ধ্বনিতে সাদির সিঁড়ির প্রান্ত কেঁপে উঠলো । একজন মানুষ আস্তে আসে করে বললো । সাদি উত্তর দিল , “আমি নিশ্চিত , আমি জানি না । অপেক্ষা করুন , আমি মিসেস সেরিডান কে জিজ্ঞেস করবো । ‘

“কে , সাদি ? ” লরা হলে আসলো ।

“বাগানের মালি ” মিস , লরা ।

আসলে তাই । দরজার ভিতরে , প্রশস্ত , পাতলা ট্রে আছে , যেখানে গোলাপি লিলি টব আছে । অন্য কোন ফুল নেই । শুধু লিলি ফুল – ক্যানেনা লিলি , বড় বড় গোলাপি ফুল , উজ্জ্বল রঙের । এখন তারা লাল হয়ে আছে ।

‘ওহ , সাদি ” লরা কান্না কান্না সুরে বললেন , সে লিলি ফুলগুলোর কাছে হাঁটু গেড়ে বসলো । ফুলগুলোর উপর হাত দিয়ে অনুভব করতে থাকলো । তার মনে হচ্ছে , তার হাতে , তার ঠোঁটে , হৃদয়ে পরিপূর্ণ ভাবে ঘিরে আছে ।

“আবারও একই ভুল । ” সে আস্তে আস্তে বললও । ‘কেউ এতো গুলো অর্ডার দেই না । সাদি , যাও , মাকে ডাকো ।

কিন্তু একই সময়ে , মিসেস সেরিডান তাদের কাছে আসলেন ।

” সব ঠিক মনে হচ্ছে ।” নরম সুরে বললেন । ‘হ্যাঁ , আমি এইগুলো অর্ডার দিয়েছি । সুন্দর না ?” লরার হাতে আলতো করে চাপ দিয়ে বললেন । ” আমি গতকাল দোকানে গয়েছিলাম । জানালা থেকে এইগুলো দেখেছি । মনে হচ্ছে এইগুলো আমার জীবনে দরকার । বাগান অনেক সুন্দর দেখাবে । ”

” কিন্তু আমি মনে করেছিলাম , তুমি বলেছিলে , যে কন ধরনের হস্তক্ষেপ না করতে । ” লরা বললো। সাদি চলে গেলো । মালি বাইরে ভ্যান নিয়ে অপেক্ষা করছে । লরা তার মার গলায় শান্ত করে জড়িয়ে কানে কামড় দিলো ।

“আমার ছোট্ট সন্তান , আমার মনে হয় ,যুক্তিবাদি মা না , তাই কি ? সেই রকম করো না । এখানে মানুষ দাঁড়িয়ে আছে ”

লোকটি আরও কিছু লিলি আলাদা ট্রে এর বহন করছে ।

” , দরজার পাশে করে একটি একটি করে সাজিয়ে রাখেন , দুই বারান্দাতে সাজিয়ে রাখনে । ” সেরিডান বললেন , ” তুমি কি রাজি , লরা ? ”

“ওহ , মা , আমি রাজি ”

শেষ পর্যন্ত ড্রয়িং রুমে , মেগ , জস , ছোট্ট হ্যান্স পিয়ানো বাজাতে পেরেছে ।

“এখন , যদি সোফাটা দেয়ালের সাথে রাখি , আর চেয়ার বাদে সব কিছু সরিয়ে নেই , তাহলে কেমন হয় ? ”

‘দাড়াও’

“হ্যান্স , এই টেবিলগুলো স্মোকিং রুমে নিয়ে যাও । একটা সুইপার ডাকো , কার্পেটের ময়লাগুলো উঠানোর জন্য । এক মিনিট , হ্যান্স — ‘ জস , কাজের লোকদেরকে অর্ডার দিতে পছন্দ করে । তারাও তার কথা শুনে । সে এমনভাবে তাদেরকে নিয়ে কাজ করে , মনে হয় তারা নাটকে অংশ গ্রহন করছে , ” মাকে ডাকো , মিস লরাকেও ডাকো । ”

“অনেক ভালো , মিস জস ”

মেগের দিকে ঘুরিয়ে বললো , ” আমি গান গাওয়ার সময় পিয়ানোর আওয়াজ শুনতে চাই । চেষ্টা করতে থাকো । জীবনটা বড়ই কঠিন । ”

পম !! টা- টা- টা- টিইই টা । এতো জোরে পিয়ানো বাজচ্ছে , জসের চেহারা বদলে গেলো । সে আঙ্গুলগুলো নিয়ে মুষ্টিবদ্ধ । কষ্ট নিয়ে তাকাতে দেখলো , তার মা আর লরা আসছে ।

“এই জীবন কঠি– ইন , কতো কান্না — কতো দীর্ঘশ্বাস … ভালবাসা পারে বদ…লে দিতে , এই জীবন কঠি– ইন , কতো কান্না — কতো দীর্ঘশ্বাস … ভালবাসা পারে বদ…লে দিতে , তারপরে , বাই বাই !! ”

“বাই বাই ” এর সময় পিয়ানোর আরও বেপরোয়া আওয়াজ তুলতে থাকলো । তার চেহারা , অসহায় আকার ধারন করলো । একটু করুন হাসি মুখ মণ্ডলে ছেয়ে পড়লো ।

“আমার অনেক সুন্দর কণ্ঠ , তাই না , মা ? ” খুশি খুশি সে জিজ্ঞেস করলো ।

” এই জীবন কঠি– ইন , আশা করতে করতে মরণ আসে , স্বপ্ন — বাঁচিয়ে রাখে ”

সাদি এবার তাদেরকে বাঁধা দিলো । “কি হচ্ছে , সাদি ?”

“দয়া করো । মা জিজ্ঞেস করেছে , স্যান্ডউইচের ফ্ল্যাগ তোমার কাছে কি না ? ”

” স্যান্ডউইচের ফ্ল্যাগ সাদি ? ” মিসেস সেরিডান অবাক হয়ে বললো । মনে হচ্ছে কিছুই জানা নেই । বাচ্চারা বুঝতে পারলো তিনি তা পান নাই । “আমাকে দেখতে দাও ” তিনি সাদিকে বললেন । ” রাঁধুনিকে গিয়ে বলো , আমি দশ মিনিটের মধ্যে ব্যবস্থা করে দিচ্ছি । ”

সাদি চলে গেলো ।

“এখন লরা । ” মাকে দ্রুত বললেন । “স্মোকিং রুমে আমার সাথে আসো । আমি এনভেলাপে নামগুলো পেয়েছি । তোমাকে এইগুলো আমার জন্য লিখতে হবে । মেগ , সিঁড়ির উপরে যাও , মাথা থেকে ভেজা জিনিস সরিয়ে ফেলো । জস , এক দৌড়ে কাপড় পালটিয়ে আসো । আমার কথা কি শুনতে পাচ্ছো , বাচ্চারা ? নাকি , তোমাদের বাবাকে রাতে সব বলে দিব ? যদি রান্নাঘরে যাও , রাঁধুনিকে শান্ত করো , করবে কি ? সকাল থেকে তাকে নিয়ে ভয়ের মধ্যে আছি । ”

এনভেলাপটি ডাইনিং রুমের ঘড়ির পিছনে পাওয়া গিয়েছে । কিন্তু কিভাবে সেই এখানে আসলো মিসেস সেরিডান কিছুই বুঝতে পারলো না ।

‘বাচ্চাদের মধ্যে কেউ মনে হয় , চুরি করেছে । কারন আমার মনে আছে , ক্রিমের পনির , লেবু -দই । তোমরা কি তা করেছো ? ‘

“হ্যাঁ”

“ডিম , এবং — ” মিসেস সেরিডান এনভেলাপটি তার কাছ থেকে সরিয়ে রাখলো । “”এটি দেখতে ইঁদুরের মতন হয়েছে , ইঁদুরের মতন তো হতে পারে ? তাই না ? ”

‘জলপাই , পেট ‘ লরা বললো । লরা তাঁর কাঁধের দিকে তাকালো ।

‘হ্যাঁ , অবশ্যই , জলপাই । শুনতেও তো ভয় লাগে । ডিমের সাথে জলপাই । ‘

তারা অবশেষে শেষ করলো । লরা রান্নাঘর থেকে সেগুলো সরিয়ে রাখলো । সে দেখলো , জস রাঁধুনিকে শান্ত করছে । কিন্তু দেখতে রাগী মনে হচ্ছে না ।

“এতো সুন্দর স্যান্ডউইচ আগে কখনো দেখি নি । ” জন খুশিতে বললো । ‘কতোগুলো বানিয়েছো , রাধুনি ? পনেরোটা ? ‘

“পনেরোটা , মিস্‌ জস”

“দারুন হয়েছে । অভিনন্দন আপনাকে ”

রাধুনি ছুরি দিয়ে পাউরুটি শক্ত বাইরের আবরণ কাটতে হাসলো ।

“গডবারস এসেছে ” সাদি জোরে জোরে সবাইকে জানিয়ে দিলো । সে দেখলো জানালা পাশ দিয়ে লোকটা চলে যাচ্ছে ।

তার মানে ক্রিম চলে এসেছে । গডবার ক্রিমের বানানো হাত দারুন । কেউ সেগুলো ঘরে বানানোর চিন্তাও করতে পারবে না ।

“সেগুলো এনে , টেবিলে রাখো , আমার মেয়ে ” রাধুনি বললো ।

সাদি সেগুলো এনে , দরজার পিছনে চলে গেলো । লরা , জস এইসব ব্যাপারে কোন আগ্রহ নেই । কিন্তু তারা জানে ক্রিমের পাফটা দারুন হয় । রাধুনি ক্রিম বানানো শুরু করে দিয়েছে । অনেক কিছু একসাথে দিয়ে চিনি মিশাতে শুরু করলো ।

“তারা কি সেগুলো পার্টিতে ফিরিয়ে দিবে না ? ” লরা বললো ।

“আমার মনে হয় , তারা দিবে । ” জস বললো । ফেরত পেতে কে না চায় । “সেগুলো অনেক হাল্কা , উজ্জল ”

‘অল্প একটু টেস্ট করে দেখো তো ‘ নরম সুরে বললেন ।”আরে বাপু , আমি কিছুই জানি না ।”

আহ্‌ , অসশম্ভব ব্যাপার । ব্রেকফাস্টের পর , সুস্বাদু ক্রিম বানানো হয়ে যাবে । পুরো ব্যাপারটা ভেবে মনে শিহরণ জাগছে । দুই মিনিট পর , জস , লরা আঙ্গুল দিয়ে ক্রিমগুলো মুখে নিয়ে স্বাদ নিতে করতে শুরু করলো ।

“বাগানে চলো । পিছনের দরজা দিয়ে চলো ” লরা বললো । “আমি দেখতে চাই , কিভাবে লোকজন তাঁবু বানাচ্ছে । তারা অনেক ভালো মানুষ । ”

কিন্তু পিছনের দরজা রাধুনি , সাদি , গডবারস বন্ধ করে রেখছে ।

কিছু একটা ঘটেছে ।
“টুক- টুক -টুক” রাঁধুনি ব্যস্ততার সহিত কাজ করছে । সাদি তার গাল এমনভাবে ধরেছে মনে হচ্ছে , তাঁর দাঁতে ব্যাথা । হ্যানের মুখখানা এমনভাব করলো মনে হচ্ছে বুঝতে কষ্ট হচ্ছে । শুধু গডবারস আনন্দে কাজ করছে , তাঁর নিজের কাজ এটি । ———

“কি ব্যাপার ? কি ঘটেছে ? ”

“সেখানে একটা মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটেছে ” রাঁধুনি বললো । “এক মানুষ মারা গিয়েছে ”

“মানুষ মারা গিয়েছে ! কখন , কিভাবে ? ”

কিন্তু গডবার কিছু বলতে চাচ্ছে না এই ব্যাপারে ।

“জানো , সেইখানে ছোট ছোট বাড়ি আছে , মিস ? ” তাদেরকে চিনেনে ? অবশ্যই সে তাদেরকে চিনে । ” সেখানে এক যুবক থাকতো , স্কট নাম তাঁর । ট্র্যাকশন ইঞ্জিনের গাড়ি দেখে ঘোড়া ভয় পেয়ে যায় , সেখান থেকে পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পায় । সকালে হক স্ট্রীটে এই ঘটনা ঘটে । পড়ে মারা যায় ”

“মারা গেলো !!” লরা গডবারসের দিকে তাকিয়ে থাকলো ।

“যখন তাকে নেয়া হচ্ছিলো , তখনই মারা গিয়েছে । ” গডবারসকে উৎসাহের সহিত বললো । ” আমার আসার পথে , তারা বডি নিয়ে কথা বলছিলো ” সে রাঁধুনিকে বললো , “তাঁর এক স্ত্রী , পাঁচটি ছোট সন্তান রেখে গিয়েছে । ”

“জস , এখানে আসো ” , লরা তাঁর বোনের হাতা ধরে তাকে টেনে রান্নাঘরের পাশের দরজা দিয়ে নিয়ে গেলো । সে থামলো নত হয়ে বললো , ” জস !! ” ভয়ার্ত কণ্ঠে সে বললো । “আমাদেরকে কি সব বন্ধ করে দিচ্ছি ? ”

“সব বন্ধ করে দিচ্ছি ! , লরা” জস্‌ অবাক হয়ে বললো , তাঁর চোখে পানি এসে গেলো । “আপনি কি বুঝাতে চাচ্ছেন ?”

“গার্ডেন পার্টি বন্ধ করে দাও ” জস্‌ কি মনে করছে ?

কিন্তু জস এখনো হতবাক । “গার্ডেন পার্টি বন্ধ করে দিবো ? আমার লরা , পাগলামি করো না , আমরা এই ধরনের কিছু করতে পারি না । কেউ আশা করে না । বাড়াবাড়ি করো না । ”

“কিন্তু একজন মানুষ গেটের বাইরে মারা গিয়েছে , আমরা গার্ডেন পার্টি তো করতে পারি না , তাই না ?”

হ্যাঁ , এটি অবিবেচকের মতন কাজ হয়ে যায় । সেখানে তাদের দুইটি বাড়ি আছে । —– মাঝখান দিয়ে একটি প্রশস্ত রাস্তা চলে গিয়েছে । কিন্ত তারা খুব কাছাকাছি ছিলো । তাই চোখে ব্যাপারটা লাগতে পারে । প্রতিবেশীদের সাথে এমন করাটা উচিত হবে না । চকোলেট রঙের বাড়িতে তারা থাকতো ,একটু নিচ জাতির । বাগানের জমিতে শুধু বাধাকপির স্তূপ ,মুরগী , আর টমেটো আছে । কাল ধোঁয়া চিমনি থেকে বের হচ্ছে । ধোপা , সুইপার , মুচি সেখানে থাকে । সামনের দিকে যার বাড়ি , সে অনেক গুলো ছোট ছোট পাখি আছে । ছেলেমেলে সারাক্ষন হৈচৈ করে । তাদের বিরক্তিকর আচরনের কারণে তাদের সেখানে আগে থাকতে দেয়া হতো না । যখন তারা বড় হচ্ছিলো , লরা , লরি ঘুরতে ঘুরতে সেখান দিয়ে যেতো । বিরক্তিকর নোংরা জায়গা । তারা কাঁপতে কাঁপতে সেখান থেকে বেরিয়ে আসলো । কিন্তু কেউ কোথাও যায় , সে সব কিছু দেখবে । সেইভাবে তারা গিয়েছিলো ।

১০

“একটু চিন্তা করো ব্যান্ড দলের আওয়াজ গরীব মহিলাদের কানে গেলে কেমন লাগবে । ” লরা বললেন ।

“আহ ,লরা !!” জস সত্যিকারে এখন বিরক্ত হওয়া শুরু করেছে । “যদি প্রত্যেক দুর্ঘটনায় এইভাবে ব্যান্ড বন্ধ করে দিতে চাচ্ছো ? তুমি অনেক কঠিন জীবন কাটাতে হবে আমার শুধু তোমার ব্যাপারে কষ্ট হচ্ছে । দয়া হচ্ছে তোমার প্রতি । ” তাঁর চোখ মুখ শক্ত হয়ে গেলো । মনে হচ্ছে তারা ছোট বাচ্চা , মারামারি করছে । “তুমি মাতাল লোকের প্রতি সহানুভূতি দেখাতে পারো না ” নরম ভাবে বললো ।

“মাতাল !! কে বলেছে সে মাতাল ? ” লরা গরম হয়ে গেলো । এই ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে পড়লে যা তারা করে তাই করলো , লরা বললো । ‘”আমি সোজা মায়ের কাছে যাচ্ছি । ”

“যাও সোনামণি ” আদর করে বললো ।

“মা , আমি কি আসতে পারি ?” লরা দরজা হাতল ঘুরিয়ে বললো ।

“অবশ্যই , আমার মেয়ে । কেনো , কি হয়েছে ? তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন ? ”

মিসেস সারিডান ড্রেসিং টেবিল থেকে ঘুরে তাকালো । নতুন টুপি কেমন হচ্ছে টা দেখছিলো ।

“মা , একজন মানুষ মারা গিয়েছে ” লরা বললো ।

“বাগানে তো না ?” মা বাঁধা দিয়ে বললো ।

“না , না ! ”

“আহ , কি ভয় না তুমি লাগিয়ে দিয়েছিলে । ” মিসেস সারিডান এক মুক্তির শ্বাস নিলেন । মাথা টুপি খুলে , হাঁটু গেড়ে বসলেন ।

“কিন্তু , শুনো মা ” লরা বললেন । এক নিঃশ্বাসে বলতে লাগলো ভয়ানক কথাটা । “অবশ্যই , আমরা পার্টি করতে পারি না , পারি ? ” সে বারবার করে বললো । “ব্যান্ড পার্টি লোকরা আসছে , তারা আমাদের কথা শুনবে । তারা আমাদের প্রতিবেশি । ”

লরা কথাবার্তা শুনে জসের মতই অবাক হয়ে গেলো । এই ধরনের কথা শুনলে যে কেউ অবাক হয়ে যায় । সে লরার কথা মেনে নিলেন না ।
১১

কিন্তু , মেয়ে একটু কম্ন সেন্স ঘাটাও , এটি শুধু মাত্র একটা দুর্ঘটনা । আমি বুঝতে পারছি না , যদি কেউ মারা যায় – এবং কেউ এই ব্যাপার নিয়ে পরে থাকে , তাহলে কিভাবে তারা বাঁচবে ? আমাদের পার্টি চালিয়ে নেয়া উচিত , তাই না ?

লরা “হ্যাঁ ” বলতে হয়েছে , কিন্তু সে ঠিক মতন মানতে পারছে না । সে মায়ের সোফায় কুশন ধরে বসে আছে ।

“মা , এই ব্যাপারটা একটু নির্মম হয়ে যায় না ?” তিনি বললেন ।

“ডার্লিং !” মিসেস সারিডান উঠে তাঁর কাছে গেলেন । টুপি তাঁর হাতে নিলেন । লরা তাকে থামানোর আগে , তিনি বললেন , “আমার সোনা , এই টুপিটা তোমার । তোমার জন্য বানিয়েছি । আমি তোমাকে এই টুপি নিয়ে ছবি দেখতে চাই । তোমাকে দেখ ! ” তিনি আয়না হাতে নিলেন ।

‘কিন্তু মা ‘ লরা বারবার করে বলতে লাগলো । নিজেকে না দেখে , আরেক দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো ।

এইবার মিসেস সারিডান ধৈর্য হারিয়ে ফেললো ।

“তুমি পাগলামি করছো , লরা ” ঠাণ্ডাভাবে বললো । “আমাদের থেকে কোন মানুষ ত্যাগ আশা করি নি । খুব একটা ক্রুন অবস্থা হয় নি যে আমাদের খুশি ত্যাগ করতে হবে । ”

“আমি কিছুই বুঝতে পারছি না ” লরা বললো । সে ঘর থেকে দ্রুত তাঁর রুমে চলে গেলো । হঠাৎ তাঁর সুন্দর মুখখানা আয়নাতে দেখলো । তাঁর কালো টুপিতে সোনালি রঙের ফুল আছে । কালো নরম ফিতা তার চারিদিকে । সে কখনো মনে করে নি , তাকে এতো সুন্দর দেখাবে । মা কি তাহলে ঠিক ? সে চিন্তা করতে থাকলো । ভাবলো , মার কথায় ঠিক । আমি কি বাড়াবাড়ি করছি ? হতেও পারে। কিছুক্ষনের জন্য , সে সেই মহিলা , সন্তানদের কথা মনে করলো , সেই লাশটা তাদের ঘরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে । তার কাছে একগুলো অস্পষ্ট , অবাস্তব মনে হলো , অনেকটা খবরের কাগজের মতন । আমি পার্টি শেষ হবার আবার এইগুলো মনে করবো , সে ভাবলো । যেভাবেই হোক , তার প্ল্যানটাই ঠিক ।

১২

দেড়টায় । দুপুরের খাবারের পর্ব শেষ হয়ে গিয়েছে । আড়ায়টায় , আনন্দ করার জন্য সবাই রেডি হলো । সবুজ কোটের ড্রেস পড়া ব্যান্ড দল উপস্থিত হয়েছে । টেনিস কোর্টের কর্নারের তাদের জন্য জায়গা করা আছে ।

“আমার ডার্লিং ” কিটি মেইটল্যান্ড কাঁপানো গলায় বললো । “কেমন জানি তাদেরকে ব্যাঙের মতন দেখাচ্ছে ! তাদেরকে পুকুরের চারদিকে পাতার উপর বসিয়ে দিলে ভালো হতো । ”

লরা এসে তাদেরকে স্বাগতম জানালো । ———- তাকে দেখে তার দুর্ঘটনার কথা মনে পড়লো । তাকে সে বলতে চেয়েছিলো । যদি লরির সাথে কেউ এক মত হয় , তাহলে সব কিছু ঠিক আছে । তাকে সে হল পর্যন্ত ফলো করলো ।

“লরি !”

“হ্যালো ” প্রায় অর্ধেক সিঁড়ি পর্যন্ত সে পোঁছে গেছে । সে ঘুরতেই সে দেখে লরা তার পিছনে , হাঁপাচ্ছে । সে লরাকে দেখে চোখমুখ বড় করে ফেললো । “লরা ,তোমাকে ভীষণ সুন্দর দেখাচ্ছে ।” লরি বললো । “কতো সুন্দর তোমার টুপি !”

লরা আস্তে করে বললো , “তাই ? ” লরি হাসলো , আর কিছু বললো না ।

শীঘ্রই মানুষজন পুকুরের ধারে আসতে শুরু করলো । ব্যান্ড রেডি হচ্ছে । ওয়েটারগুলো বাড়ি থেকে তাঁবুর দিকে দৌড়ানো শুরু করলো । যেদিকে চোখ যায় , দেখা যায় , প্রেমিক প্রেমিকারা এক সাথে হাঁটছে , ফুল দিয়ে অভিবাদন জানাচ্ছে , গাছের চারপাশে হাঁটছে , ফুল্গুলো দেখছে । মনে হচ্ছে পুরো এক ঝাঁক পাখি আজ বাগানে এসে পড়েছে । তাদের চোখ মুখে সবারই হাসি ।

“ডার্লিং লরা , তোমাকে তো দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে !”

“টুপিটা তোমাকে বানিয়েছে !”

“লরা , তোমাকে তো দেখতে স্প্যানিশদের মতন লাগছে । এতো আকর্ষণীয় রুপ আগে কারোর মধ্যে দেখে নি । ”

লরা , লজ্জা পেলো , আস্তে করে বললো , “চা খেয়েছো ? বা , ঠাণ্ডা কিছু ? ফলের জুস গুলো দারুন । ” সে বাবার কাছে গিয়ে অনুরোধ করলো , ‘বাবা , ব্যান্ডদেরকে কিছু খেতে দেয়া যায় না ? ‘

১৩

আস্তে আস্তে করে বিকাল হচ্ছে , ছায়া পড়তে শুরু করছে , ফুলের পাপড়িগুলো নিজেরদেরকে গুটিয়ে নিচ্ছে ।

“এতো মজার গার্ডেন পার্টি আগে কোনদিন দেখে নি ……। ” “দারুন হয়েছে ……”

সবাইকে বিদায় জানানোর জন্য মাকে সাহায্য করছে । তারা সবাই বারান্দাতে জড়ো হয়েছিলো ।

“সব শেষ , সব শেষ … ধন্যবাদ স্বর্গ ” মিসেস সারিডান বললেন । “আরেকটি পর্ব , লরা , চলো , কফি খাই । আমি ক্লান্ত । হ্যাঁ , ভালোভাবে সব শেষ হয়েছে , কিন্ত ‘পার্টি , পার্টি , কেন যে বাচ্চারা বারবার বলে করতে !!’ তারা সবাই তাঁবুর ভিতর বসেছিলো ।

“স্যান্ডউইচ খাবেন , বাবা । আমি ফ্ল্যাগে লিখেছি ”

“ধন্যবাদ” মিস্টার সারিডান এক টুকরো মুখে নিলো । একটা স্যান্ডউইচ শেষে আরেকটি নিলো । “আমার মনে হয় আজকে তুমি দুর্ঘটনার কথা শুনো নি ?”

“আমার প্রিয় ” মিসেস সারিডান হাত তুলে বললেন , “শুনেছি , কিন্তু পার্টিতো নষ্ট করতে পারি না । লরা বন্ধ করতে চেয়ছিলো ”

“সব দিক দিয়ে ভয়াবহ ব্যাপার । ” মিস্টার সারিডান । “লোকটা বিবাহিত ছিল । গলিতেই থাকতো । স্ত্রী , ছয়জনের মতন বাচ্চা রেখে গেছে ”

হঠাৎ , অদ্ভুত রকমের নিশব্দতা চারিদিকে । মিসেস সারিডান হঠাৎ অস্থির হয়ে গেলো ।

হঠাৎ সে চোখ মেলে তাকালেন । সেখানে স্যান্ডউইচ, কেক, পাফস্‌ অনেক কিছু খাওয়া হয় নি , টেবিলে পড়ে আছে , তার মাথায় দারুন এক বুদ্ধি এসেছে ।

“আমি জানি ” তিনি বললেন , “চলো , সেগুলো ঝুড়িতে রাখি , তারপর সেই গরীবলোকদের পাঠিয়ে দেই । যে কোন মুল্যে ,দারুন হবে বাচ্চাদের জন্য , তুমি কি রাজি না ? সব কিছু রেডি আছে , লরা ! ” তিনি লাফ দিয়ে উঠে পড়লেন । “আমাকে একটা বড় ঝুড়ি দাও ”

১৪

“কিন্তু , মা , তুমি কি মনে করো এইটা ভালো কোন চিন্তা ?” লরা বললো ।

আবার , তার চিন্তা । সবার থেকে মনে হচ্ছে সে একটু আলাদা । এইসব ফেলে দেয়া খাবারগুলো নিয়ে তাদেরকে দেয়া । গরীব মহিলারা ব্যাপারটা কি পছন্দ করবে ?

“অবশ্যই !! আপনি এখন কি করবেন আজকে ? এক – দুই ঘণ্টা আগে তাদের প্রতি সহানুভূতি দেখাচ্ছিলে , আর এখন –”

আহ , ভালো ! লরা ঝুড়ি নিয়ে এসে , সব কিছু এক এক করে , ঝুড়িতে রাখলো ।

“তুমি নাও এগুলো ” বললেন তিনি । “দৌড়ে যাও , অপেক্ষা করো না । সাথে একটা লিলি ফুল নিয়ে যাও । ওই ধরনের মানুষ এই ধরনের ফুল দেখলে অনেক খুশি হয় । ”

“ফুলের ডাটা তার জামা নষ্ট করে দিবে ” জস বললো ।

তারা তাই করলো । একদম সময় মত । “শুধু ঝুড়ি , তারপর , লরা ! ” – তার মা তাঁবু থেকে বের হয়ে তাকে ফলো করতে বললো – ” কোন কারণে তা করবে না — ”

‘কি মা ?’

এই ধরনের চিন্তা সন্তানের মাথায় ঢুকানো ব্যাপারটা ভালো না । “কিছু না ! যাও ”

সন্ধ্যা প্রায় গড়িয়ে আসছে । লরা গার্ডেনের দরজা বন্ধ করে দিলো । একটা বড় কুকুর দৌড়াতে দৌড়াতে ছায়া তৈরি করছিলো । রাস্তাগুলো দেখতে সাদা দেখাচ্ছিলো । বাড়িগুলোর মধ্যে এক ধরনের গভীর ছায়া পড়েছিলো । বিকাল বেলার পরে কতো শান্ত অবস্থা চারিদিকে । যেখানে লাশটা ছিল সে সেদিকে গেলো । সে কিছুই বুঝতে পারছে না । কেন সে পারছে না ? সে এক মিনিট অপেক্ষা করলো । তার কাছে মনে হচ্ছিলো , চুম্বন , শব্দ , চামুচের টুং টাং , , হাসির শব্দ , ঘাসের গন্ধ সব তার মনকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে । তার কোথাও জায়গা নেই । কি অদ্ভুত ! উপরের নীল আকাশটাও বিষণ্ণ লাগছিলো । তারপর ভাবলো , “হ্যাঁ , অনেক ভালো পার্টি ছিল ”

এখন প্রশস্ত রাস্তাটা পার হয়ে গিয়েছে । গলির মুখে এসে পড়েছে , ধোঁয়াটে , অন্ধকার । মহিলারা শাল নিয়ে , আর পুরুষরা টুপি নিয়ে ছোটাছুটি করছে । বেড়ার চারিদিকে মানুষ , আর বাচ্চারা খেলছে । আস্তে করে গুনগুন শোনা যাচ্ছে ছোট বাড়িগুলো থেকে । মিটমিট করে আলো জ্বলেছে চারিদিকে । একটু ছায়া জানালার ওইদিকে পড়ছে । লরা তার মাথা নিচু করে দ্রুত পা বাড়ালো । সে ভাবলো তার একটা কোট আনা উচিত ছিলো । ফ্রকটা বেশি উজ্জ্বল । টুপিটাও চকমক করছে। যদি আরেকটা টুপি হতো এর বদলে । মানুষগুলো তার দিকে কেন তাকিয়ে আছে ? মনে হচ্ছে , আসাতে কোন একটা ভুল হয়ে গিয়েছে । সে বুঝতে পেরেছে , তার ভুল হয়ে গিয়েছে । এখন কি তার ফিরে যাওয়া উচিত হবে ?

১৫

না বেশি দেরি হয় নি । এটাই সেই ঘর । মানুষের এক জটলা বেঁধে আছে বাইরে । গেইটের বাইরে এক বৃদ্ধ মহিলা , লাঠি নিয়ে চেয়ারে বসে দেখছে । পায়ের নিচে খবরের কাগজ পড়ে আছে । এক চিৎকার লরাকে আকর্ষণ করলো । মানুষগুলো এক দিকে সরে গেলো । মনে হচ্ছে এটাই সে চেয়েছিলো , তারা মনে হয় জানতো সে আসবে ।

লরা ভীষণ নার্ভাস হয়ে পড়েছে । মাথা থেকে লাল ফিতা তার কাঁথে পড়েছে । সে দাঁড়ানো মহিলাকে জিজ্ঞেস করলো , “এইটা কি মিসেস স্কটের বাড়ি ? ” মহিলাটি অদ্ভুত একটা হাসি দিয়ে বললো , “হ্যাঁ , মেয়ে ।”

এখান থেকে সরে যেতে হবে !! সে আসলে বলেছিলো , “আমাকে সাহায্য করো ” ছোট একটা রাস্তা ধরে সে হাঁটে যাচ্ছিলো , তারপর নক করলো । সেই দৃষ্টিগুলোর থেকে , বা নিজেকে কিছু দিয়ে আবৃত করার জন্য , একটা মহিলার সালের জন্য হলেও তাকে চলে যেতে হবে , আমি ঝুড়িটা এখান থেকে রেখে চলে যাবো , সে ভাবলো । খালি হবার জন্য অপেক্ষা করতে পারবো না ।

দরজা খুললো , বিষণ্ণতায় ভরা একটি মহিলাকে দেখা গেলো ।

লরা বললো , “আপনি কি মিসেস স্কট ?” কিন্তু তার ভয়ে , মহিলা উত্তর দিলো , “চলে যান , দয়া করে , মিস । ” দরজা বন্ধ করে দিতে চাচ্ছিলো ।

“না , ” লরা বললেন , “আমি ভিতরে আসতে চাচ্ছি না , আমি শুধু ঝুড়িটা রেখে দিতে এসেছি । মা পাঠিয়েছে । ”

মহিলাটি মনে হয় ,কিছু শুনতে চাচ্ছে না ।””এই দিকে যান , মিস্‌” বিষণ্ণগলায় বললেন । লরা তাকে ফলো করলো ।

সে এক ভাঙাচোরা রান্নাঘরের দিকে গেলো । অল্প অল্প করে একটা বাতি জ্বলছে । এক মহিলা সেখানে বসে আছে ।

“এম্‌ ” যে তাকে নিয়ে গেলেন ভিতরে সে মহিলাটি বললো । “এম্‌ ! এক তরুণী । ” লরা দিকে ঘুরে বললো । ” আমি তার বোন , মিস্‌ । ক্ষমা করবেন , করবেন না ? ”

১৬

“হাঁ , অবশ্যই । লরা বললো । ।”দয়া করে , তাকে বিরক্ত করবেন না । আমি চলে যেতে চাচ্ছি — ”

কিন্তু সেই সময়ে মহিলাটি গরম হয়ে গেলো । তার চোখ , মুখ ফুলে লাল হয়ে গেলো , ফোলা ফোলা চোখ , ঠোঁট । দেখতে অনেক ভয় লাগছে । মনে হয় সে বুঝতে পারছে না , কেনো , লরা সেখানে এলো । কেনো এক মহিলা রান্নাঘরে ঝুড়ি নিয়ে এসেছে ? কি চাই সে ? মুখ আবার ফুলে উঠলো ।

“ঠিক আছে । ” আরেকজন বললো । “”আমি তরুণীকে ধন্যবাদ দিবো । ”

আবার সে বললো , “আপনি কি তাকে মাফ করবেন , মিস্‌ , আমি নিশ্চিত ” তার মুখ ফুলা , এক ধরনের কৃত্রিম হাসি তার মুখে ।

লরা বের হয়ে যেতে চাচ্ছিলো । পথ দিয়ে যেতেই দরজা খুলে গেলো । সোজা বেডরুম দিয়ে সোজা চলে গেলো , যেখানে সেই লাশটা রাখা ছিলো ।

“আপনি কি একবার দেখবেন তাকে ?” এম এর বোন বললো । লরার থেকে সামনে গিয়ে বললো । “ভয় পাবেন না । ” আন্তরিকতার সহিত বললেন । আস্তে করে চাদরটা সরিয়ে ফেললেন । “দেখেন ছবিটা । কিছুই দেখার নেই । এইদিকে আসেন ”

লরা আসলো ।

এক যুবক শুয়ে আছে , ঘুমাচ্ছে । গভীর ঘুম । তাদের থেকে অনেক দূরে । অনেক শান্ত । স্বপ্নের মধ্যে আছে সে । কোন দিন জাগবে না । বালিশ উপর মাথা রাখা হয়েছে । তার চোখ মুখ বন্ধ । তার চোখ বন্দ । তার চোখের পাতার কাছে তারা অন্ধ । স্বপ্ন থেকে সে অনেক দুরে । গার্ডেন পার্টি , বাস্কেট , ফিতার ফ্রক তার কাছে কোন অর্থ নেই । সব কিছু থেকে সে দূরে । সে অনেক সুন্দর । যখন তারা হাসছিলো , ব্যান্ড গান হচ্ছিলো , তখন এই রত্ন এইখানে এসেছিলো । খুশি — খুশি … সব কিছু ভাল ভাবে হচ্ছে , ঘুমন্ত মুখটি বলছে । শুধু এটাই হওয়া উচিত , আমি সন্তুষ্ট ।

১৭

কিন্তু একই ভাবে তোমাকে কাদতে হবে । সে তাকে কিছু না বলে ঘর থেকে যেতে পারে না । লরা শিশুদের মতন ফুঁপিয়ে কান্না করতে থাকলো ।

“আমার টুপিটাকে ক্ষমা করে দিবেন ” সে বললো

এই সময়ে সে এম এর বোনের জন্য অপেক্ষা করলো না। সে নিজেই রাস্তা বের করে , দরজা থেকে বের হয়ে পড়লো । রাস্তা দিয়ে অন্ধকারের মানুষগুলোর থেকে পার হয়ে গেলো । গলির মুখে লরির সাথে দেখা ।

ছায়া থেকে সরে পা বাড়িয়ে বললো , “তুমি কি , লরা ? ”

“হ্যাঁ ”

“মা একটু উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছিলো । সব কিছু কি ঠিক আছে ? ”

“হ্যাঁ , মোটামুটি । আহ , লরি ” সে লরির হাত ধরে বললো ।

“আমি বলেছি না , তুমি কাদবে না ?” ভাই ব্জিজ্ঞেস করলো ।

লরা মাথা নাড়ালো ।

লরি তার হাত কাঁধে রেখে বললেন , “কেঁদো না ” শান্ত , আদরমাখ কণ্ঠে বললেন । “খুব কি ভয়াবহ ছিলো ?”

“না ” লরা ফুঁপিয়ে বললো । “অনেক সুন্দর ছিলো , কিন্তু লরি — ” সে থেমে গেলো , ভাইয়ের দিকে তাকালো । “এটাই জীবন না ” সে থমকে বললো । “এটাই জীবন না –” কিন্তু জীবন কি সে ব্যাখা করতে পারলো না । কোন ব্যাপার না । লরি বুঝতে পারলো ।

“এটাই কি , ডার্লিং ? ” লরি বললো ।

Collected from http://razibahmed.com/the-garden-party-in-bangla-translation/

Recent Posts

Heartstopper #4 by Oseman, Alice

"Dive into the latest installment of the beloved 'Heartstopper' series with Alice Oseman's 'Heartstopper #4.' Explore the continuing journey of…

Women’s Engineering Internship Program

"Unlock your potential in engineering through our Women’s Engineering Internship Program. Join us to gain hands-on experience, receive mentorship from…

Can Wasabi Boost Cognitive Health as We Age?

"Explore the potential cognitive benefits of incorporating wasabi into your diet as you age. Discover the unique properties of this…

Guideline on the Management of Blood Cholesterol

Discover essential guidelines for managing blood cholesterol levels effectively. Explore recommendations from reputable organizations, adopt a heart-healthy lifestyle, and learn…

Cardiology Guidelines

Cardiology Guidelines: A Roadmap to Heart Health Cardiovascular disease (CVD) is the leading cause of death globally, claiming millions of…

Ways to Save Money

Simple Ways to Save Money: Smart Spending Tips for a Brighter Financial Future Saving money can feel like a daunting…